শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭, হেমন্তকাল

ইসলামি শাসনের তাৎপর্য

ধর্ম ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

মানুষকে সুষ্ঠু, সুন্দর, স্বাধীন ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন তৈরি ও প্রয়োগ করা হয় তাকে আইন বলে। এই পৃথিবীতে আইন দুভাবে সৃষ্টি হয়েছে, যথা-

১. স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত আইন।

২. মানব রচিত আইন।

ইসলামি আইন আল্লাহ প্রদত্ত ভারসাম্যপূর্ণ জীবনবিধান। মুসলমানদের জন্য নির্ভরযোগ্য আইন হচ্ছে শরিয়াহ আইন, যা কুরআন-হাদিসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলামি শরিয়াহ আইন হলো একটি জীবন পদ্ধতি ও ধর্মীয় অনুশাসন যা মুসলমানদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জীবনের সব ক্ষেত্রে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে। শরিয়াহ আইনের মূল ভিত্তি হলো পবিত্র কুরআন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ। শরিয়াহর আইনের উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করতে সাহায্য করা। মানুষের সার্বিক কল্যাণকামিতাই শরিয়তের মূল উদ্দেশ্য।

ইসলামি শরিয়াহ আইনের ভিত্তি হলো আইন সবার জন্য সমান। এই আইনে ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা সবাই সমান। যার ফলে শরিয়াহ আইন মুসলিম উম্মাহকে একসূত্রে গেঁথে রাখে। ইসলামি আইন অস্বীকার করা মানে আল্লাহর আইন, সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্বকে অস্বীকার করা। শরিয়াহ আইন মানার অর্থ আল্লাহর আইন কাঠামোকে মানা। এটা অমান্য করা মানে তাওহিদ ও রিসালাতের মূল নীতির বিপরীতে অবস্থান নেওয়া। পৃথিবীতে মানুষের তৈরি আইন পরিবর্তনশীল আর শরিয়াহ আইন অপরিবর্তনশীল। শরিয়াহ আইন আল্লাহ প্রদত্ত আইন। মানুষের হাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। পশ্চিমা আইন তথা মানুষের তৈরি আইনে উকিল কেনা যায় এবং অর্থ দিয়ে রায়কে প্রভাবিত করা যায়। পশ্চিমা আইন ধনী ও গরিবের মধ্য বৈষম্য সৃষ্টি করে। ধনীরা গরিবের চেয়ে অধিক আইনি সুবিধা ভোগ করে। শরিয়াহ আইন ঐশ্বরিক বিধান, এখানে উকিলের কোনো ভূমিকা নেই। কারণ বিচারের রায় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। কোন অপরাধের জন্য কী শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পশ্চিমা আইনে রাষ্ট্রপ্রধান ইচ্ছা করলে যে কোনো অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারে। শরিয়াহ আইনে বাদী কোনো অপরাধীকে ক্ষমা করে দিলে কাজি বা বিচারক তাকে দণ্ডিত করতে পারেন। পশ্চিমা আইন হলো গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়ার মতো। শরিয়াহ আইন না থাকার কারণে মানুষ আইনকে তোয়াক্কা করছে না, যখন তখন আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। নানারকম দুর্নীতির জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে নিরীহ জনগণ। ঘুষ ব্যতীত অফিস-আদালতে কোনো কাজ হচ্ছে না। শরিয়াহ আইন না থাকার ফলে মানুষ ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। যদি দেশে সুষ্ঠু-সুন্দর ইসলামি আইন ও আইনের প্রয়োগ থাকত তা হলে চুরি-ডাকাতি, খুন-ধর্ষণ, রাহাজানি, দুর্নীতি ও টাকা পাচার বন্ধ হয়ে যেত।

কুরআনের আইন ও বিধিবিধান মানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। আর নবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ এবং তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সুন্নত। শরিয়াহকে বলা হয় ইসলামি অনুশাসন। ইসলামি শরিয়াহ আইনের মূল কথা হলো, আল্লাহর জমিনে আল্লার আইন চালু করা। তাই ইসলামি শরিয়াহ সবাইকে অবশ্যই পালন করতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক কুরআনে বলেন, ‘আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য জীবনবিধান ও সুস্পষ্ট জীবনযাপন প্রণালি নির্ধারণ করে দিয়েছি’ (সুরা মায়েদা : ৪৮)। স্থান-কাল, বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য এই জীবন বিধান ও সুস্পষ্ট জীবন প্রণালি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য সেই কিতাব (শরিয়ত) দিয়েছেন যা নুহ (আ.)-কে এবং একই কিতাব শরিয়ত আমি ইব্রাহিম, মুসা ও ঈসা (আ.)-কে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তোমরা দ্বীন কায়েম করো। এ নিয়ে মতবিরোধ করো না’ (সুরা শূরা : ১৩)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, আমি আমার রাসুলগণকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও মিজান (ন্যায়দণ্ড)। যাতে মানুষ ইনসাফের সঙ্গে চলতে পারে। আল্লাহ কর্তৃক নাজিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালানো বা বিচার-ফয়সালা করা তাওহিদে রুবুবিয়াতের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না, বরং অন্যের বিধান দ্বারা বিচার-ফয়সালা করতে চায়, তাদের ব্যাপারে কুরআনের আয়াতগুলো দুভাগে বিভক্ত। প্রথম প্রকারের আয়াতে তাদের ঈমানহীন (মুনাফিক); দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতে কাফির, জালেম ও ফাসিক বলা হয়েছে। ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এই বিধান ও দ্বীনকে ব্যক্তিগত, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে পালন করতে হবে। একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামি শরিয়ত তথা ইসলামি অনুশাসনকে মানতে হবে। শুধু নামাজ, রোজা, হজ আদায় করলে পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না। মানুষকে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার জন্য ইসলামি দ্বীন ও বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। পৃথিবীতে ইসলামি শাসনব্যবস্থা হচ্ছে উত্তম শাসনব্যবস্থা। অন্য কোনো শাসনব্যবস্থা মানুষকে মুক্তি ও শান্তি দিতে পারেনি।

আরব দেশের আইনের কথাই ধরুন, আরব দেশের আইন হচ্ছে কুরআনের আইন। সেখানে ধনী-গরিব সবার জন্য আইন সমান। সে জন্য আইনের প্রতি তারা খুবই শ্রদ্ধাশীল। আরবরা অন্যায়ভাবে মানুষ খুন করে না, কারণ শরিয়াহ আইনে খুনের বদলে খুন করা হয়। ওরা চুরি করে না হাত কাটার শাস্তির ভয়ে। অথচ আমাদের দেশে চুরি-ডাকাতি, দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-দখলবাজি, খুন-ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। টাকা থাকলে আইনকে ‘গাইন’ বানানোর বহু নজির এ দেশে রয়েছে। আপনার জায়গা অন্যজন ভোগদখল করে খাচ্ছে। আপনি কোর্টে মামলা করে ২০ বছরেও নিজ দখলে আনতে পারছেন না। বরং এতে লাভবান হচ্ছে পুলিশ, উকিল, পেশকার। মামলার রায় পেতে আপনার পকেটের বারোটা বেজে যাচ্ছে। ততদিনে আপনার হায়াতের বাজেট শেষ হয়ে যাচ্ছে।

কোনো কারণে আপনার একজন প্রতিবেশীকে অজ্ঞাত কোনো লোক হত্যা করে ফেলল। আপনার পকেটে টাকা না থাকলে আপনি মামলাও চালাতে পারবেন না। আর রায় পেতে সময় লাগবে কয়েক যুগ। ততদিনে আপনার ভিটেমাটি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এটাই হলো ইসলামের বিপরীতে অন্য আইনের অবস্থা।

আল কুরআনের আইন ও বিধিবিধান মানা প্রত্যকে মুসলমানের জন্য ফরজ। মুসলমান হিসেবে কুরআন-সুন্নাহর বাইরে কোনো আইন মানা বাধ্যতামূলক নয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসুলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের ওপর জয়যুক্ত করেন’ (সুরা তওবা : ১৩)। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রত্যেকটি আদেশ পালনে নিহিত আছে মানবকল্যাণ ও শান্তি। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর প্রত্যেকটি নিষিদ্ধ ও বর্জনীয় কাজের মধ্য নিহিত রয়েছে উভয় জগতে অশান্তি। যা বাস্তবে বর্তমানে দৃশ্যমান ও বিরাজমান। আপনি ঈমান গ্রহণের সময় আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আমি আসমানি কিতাবকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করব এবং সে অনুযায়ী জীবনযাপন করব। আল্লাহকে দেওয়া অঙ্গীকার আপনি ভুলে গেলেন। এ দেশ থেকে কোনো দিন খুন-খারাবি বন্ধ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআনের আইন ও ইসলামি অনুশাসন চালু করা হবে না।

ইসলামই একমাত্র ধর্ম যে ধর্ম সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছে। পৃথিবীতে অন্য কোনো ধর্ম এতগুলো ন্যায়নীতি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আজকে ইসলামি শাসন ও শরিয়াহ আইন না থাকার কারণে দেশের মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। মানুষ খুন করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি, লুটপাট, চুরি-ডাকাতি, খুন-ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না। অথচ ইহুদি-খ্রিস্টান ও তাদের দালালরা এই শরিয়াহ আইনকে জংলি, বর্বর আইন বলে অপপ্রচার করছে। ইসলাম শুধু পালন করার বিষয় নয়, শুধু নামাজ-রোজা হজ-জাকাত আদায় করলে ঈমানদার হওয়া যায় না। নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মুসলমান হিসেবে দাবি করতে হলে আল্লাহর দেওয়া বিধিবিধান ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নতকে মানতে হবে। আমরা নিজেকে বড় মুসলমান দাবি করি অথচ কুরআনের আইন ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নতকে প্রতিষ্ঠা করার কথা বললে মানতে চায় না। আমাদের নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম সুন্নতও পালন করেছেন। আবার ইসলামি হুকুমত তথা ইসলামি শাসন ও আল্লাহর শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার করার জন্য একদেশ থেকে অন্য দেশে সফর করেছেন এবং সেখানে ইসলাম প্রচার ও আল্লাহর শাসন কায়েম করেছেন। যেখানে আল্লাহর আইন ও নবী (সা.)-এর সুন্নত থাকবে না সেখানে ধর্মের নামে নানারকম অধর্ম ও অপসংস্কৃতি চালু হবে।

মন্তব্য করুন

এ বিভাগের আরও খবর

ফটোগ্যালারী

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

কলিকাল | সত্য-সংবাদ-সুসাংবাদিকতা
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.