শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭, হেমন্তকাল

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন আজ

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। ভোট ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ক্যাম্পাসে। নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। আর জয়লাভের মধ্য দিয়ে ডাকসু ও জাকসুর গ্লানি ভুলে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।

রাকসুতে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী শেখ নুর উদ্দিন আবির বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার পতন সব আন্দোলনেই আমরা ছিলাম অগ্রভাগে। শিক্ষার্থীরা জানেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেই না। শিক্ষার্থীরা আমাদের ভালোবাসেন। ডাকসু বা জাকসুর মতো এখানে হবে না। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

রাকসুতে ছাত্রদল মনোনীত জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন বলেন, আমরা জাতীয় ফুটবল টিমের সদস্য, ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীসহ পদ অনুযায়ী যোগ্যদের সমন্বয়ে ইনস্কুসিভ প্যানেল করার চেষ্টা করেছি। গণতন্ত্রের চর্চা ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম করা শিক্ষার্থীরা আমাদের প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন। আমরা আশাবাদী, শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন করবেন। আমরা নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬২ সালে রাকসুর যাত্রা শুরু। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও এটি ছিল শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্রধান প্ল্যাটফর্ম। তবে ১৯৮৯ সালের পর থেকে এটি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ওই সময় রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ওই নির্বাচনে ভিপিসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পদে বিজয় লাভ করেছিলেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এরপর বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাংগঠনিক সংকট ও প্রশাসনিক স্থবিরতায় থেমে যায় রাকসু কার্যক্রম। দীর্ঘ বিরতিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশ, নীতি-আলোচনা ও সংগঠন চর্চা কমে যায় বলে মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

রাকসুর ভোটগ্রহণ শুরু সকাল ৯টায় এবং চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ তিন দশকের অপেক্ষার পর রাকসু নির্বাচন তাদের হাতে আবারও তুলে দিচ্ছে নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ, যা হয়তো বদলে দিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির গতিপথ।

উৎসমুখর ক্যাম্পাস, নিরাপত্তা জোরদার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের আগের দিন বুধবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বহিরাগত প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

দুই হাজার পুলিশ সদস্য পালাবদল করে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে বহিরাগত প্রবেশ রোধে সর্বোচ্চ নজরদারি করা হচ্ছে। এখন আমরা সুষ্ঠু ভোটের অপেক্ষায় আছি।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টায় রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রচারে ব্যস্ত ছিল বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আজ সকালে সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর, কাজলাসহ বিভিন্ন ফটকে অবস্থান করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ক্রিকেট খেলছিলেন একদল শিক্ষার্থী। নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তাইফুজ্জুমান তপু বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে আশঙ্কা ছিল, সেগুলো কেটে গিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসুক।

মন্তব্য করুন

এ বিভাগের আরও খবর

ফটোগ্যালারী

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

কলিকাল | সত্য-সংবাদ-সুসাংবাদিকতা
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.