মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭, হেমন্তকাল

সকালে

প্রতিদিন মেথির পানি পানের উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস মেথি ভেজানো পানি—শুনতে যতটা সাধারণ, এর উপকারিতা ততটাই গভীর। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ঘরোয়া পানীয়টি হজমশক্তি উন্নত করা, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং শরীরকে ভেতর থেকে ডিটক্স করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আধুনিক পুষ্টিবিদ্যার দৃষ্টিতেও এখন মেথির বীজকে ‘সুপারফুড’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ছোট, সোনালি রঙের এই তেতো দানাগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এমন সব যৌগ, যা শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ভেতর থেকেই কাজ করে।

নিয়মিতভাবে ১৫ দিন মেথি পানি পান করলে শরীরে দেখা দেয় কিছু ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এগুলো ধীরে ধীরে আসে, তবে প্রভাব ফেলে দীর্ঘস্থায়ীভাবে।

রক্তে শর্করার মাত্রা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে

মেথি দানায় রয়েছে গ্যালাক্টোম্যানান নামের এক ধরনের দ্রবণীয় আঁশ, যা রক্তে গ্লুকোজ শোষণের গতি কমিয়ে দেয়। নিয়মিত ১৫ দিন মেথি পানি খেলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেড়ে যায়, অর্থাৎ শরীর শর্করাকে চর্বি হিসেবে জমিয়ে রাখার পরিবর্তে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। নানা গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসের প্রাথমিক ধাপে এই অভ্যাস বিশেষ উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

বাড়ে বিপাকক্রিয়া, হজম হয় হালকা ও সহজ

মেথি পানির আরেকটি বড় উপকার হলো এটি শরীরের বিপাকক্রিয়াকে মৃদুভাবে সক্রিয় করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক যৌগ হজম এনজাইমকে উত্তেজিত করে এবং চর্বি ভাঙার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। নিয়মিত পান করলে পেট ফাঁপা ও ভারি লাগার অনুভূতি কমে যায়। অন্যান্য এনার্জি ড্রিংকের মতো হঠাৎ শক্তি বাড়িয়ে না দিয়ে এটি প্রাকৃতিকভাবে মেটাবলিজম ঠিক রাখে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথে প্রকাশিত এক গবেষণায়ও বলা হয়েছে, মেথি পানি বিপাকক্রিয়া স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক।

পেট পরিষ্কার থাকে, হজমতন্ত্র হয় সতেজ

মেথি প্রাকৃতিক অন্ত্র পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। এর আঁশ শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, মলত্যাগ স্বাভাবিক রাখে এবং এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। খালি পেটে এই পানি পান করলে এটি পাকস্থলীর আবরণে এক ধরনের সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, ফলে মসলাযুক্ত বা তেলযুক্ত খাবারে সৃষ্ট জ্বালাপোড়া কমে। মাত্র দুই সপ্তাহেই অন্ত্র পরিষ্কার ও হালকা অনুভূত হয়।

ত্বকে দেখা দেয় দৃশ্যমান উন্নতি

মেথি পানির ডিটক্স ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ত্বকেও প্রতিফলিত হয়। শরীর যখন ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়, তখন ব্রণ বা ফুসকুড়ি কমে আসে, ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও সতেজ। মেথির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষয়রোধে সহায়তা করে এবং দূষণ বা মানসিক চাপজনিত ক্ষতি মেরামত করে। কয়েক সপ্তাহ পরেই ত্বকের রঙে আসতে পারে একধরনের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।

হরমোন নিয়ন্ত্রণে আসে ভারসাম্য

মেথি দানায় এমন কিছু যৌগ থাকে, যা শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মতো কাজ করে। ফলে বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এটি হরমোনজনিত ওঠানামা কমাতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত মেথি পানি পান করলে মন-মেজাজ স্থির থাকে, পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি কমে এবং ঋতুচক্রের সময় কিছুটা আরাম পাওয়া যায়।

শরীর থাকে আর্দ্র ও কর্মশক্তিতে ভরপুর

ভেজানো মেথি দানা থেকে বের হওয়া জেলি জাতীয় আঁশ শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে। সকালে খালি পেটে এই পানি পান করলে ত্বক ও শরীর দুই-ই আর্দ্র থাকে, ক্লান্তি ও শুষ্কতা কমে। এর হালকা মাটির ঘ্রাণ দিন শুরুতে এনে দেয় এক প্রাকৃতিক প্রশান্তি।

কীভাবে তৈরি করবেন ও খাবেন

রাতে এক চা চামচ মেথি দানা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ছেঁকে সেই পানি খালি পেটে পান করুন। চাইলে হালকা গরম করে খাওয়া যায়, আবার কেউ কেউ ভেজানো দানাগুলো চিবিয়ে খান অতিরিক্ত আঁশের জন্য। নিয়মিত ১৫ দিন এভাবে খেলে এর সুফল স্পষ্ট অনুভব করা যায়।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শরীরের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা। যদি কোনো অস্বস্তি অনুভূত হয়, তাহলে কয়েক দিন বিরতি দিন। ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে মেথি পানি হতে পারে আপনার প্রতিদিনের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যসহায়ক পানীয়।

মন্তব্য করুন

এ বিভাগের আরও খবর

ফটোগ্যালারী

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

কলিকাল | সত্য-সংবাদ-সুসাংবাদিকতা
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.