আওয়ামী লীগের শাসনামলে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক মামলায় সাবেক ও বর্তমান ২৫ সেনা কর্মকর্তাসহ ৩২ আসামির আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের দিন ধার্য রয়েছে। তবে তারা হাজির না হন অথবা তাদের হাজির না করা হয়, তাহলে সবাইকে হাজির হতে দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
প্রসিকিউটর গাজী মোহাম্মদ এম এইচ তামিম বলেন, ‘গুমের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তারা যদি হাজির হতে চান- তা পারেন বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের গ্রেফতার করে হাজির করতে পারেন। ট্রাইব্যুনাল চাইলে তাদের জামিন দিতে পারেন, তারা যদি জামিন চান এবং জামিনের গ্রাইন্ড থাকে অথবা ট্রাইব্যুনাল তাদের কারাগারে প্রেরণ করতে পারেন।’
তিনি জানান, যদি ট্রাইব্যুনাল তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন তাহলে কারা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের কোন কারাগারে রাখবেন। যদি ওনারা (সেনা কর্মকর্তারা) হাজির না হন অথবা তাদের হাজির করা না হয় তা হলে তাদের বিষয়ে দু’টি জাতীয় পত্রিকায় (বাংলা এবং ইংরেজি) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং তারিখ নির্ধারণ করা হবে, ওনাদের হাজির করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেফতারের বিষয়ে প্রসিকিউশনের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে ট্রাইব্যুনালের কাছে কোনো তথ্য থাকলে আগামীকাল বুধবার জানানো হতে পারে যে, কীভাবে/কোথায় আছে। ফেসবুকে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর আছে যেটা আপনারা জানেন কিন্তু তাদের অথরিটি এ বিষয়ে এখনও কিছু বলেনি, আমাদের জানা মতে।’
সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর তামিম আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন সাবেক বিচারপতি, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ বহু আসামিকে ট্রাইব্যুনালে আনা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আসামি কে, তা দেখা হয় না। এর আগে গত ৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী লোকদের গুম করে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে ৩০ জনকে আসামি করা হয়।
চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এসব অভিযোগ আমলে নেন। একইসঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভিন্ন মতাদর্শের লোক কিংবা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক, লেখক-সাংবাদিকদের তুলে নিয়ে গোপন বন্দিশালায় রেখে নির্যাতনের বীভৎস বর্ণনা তুলে ধরেন। শুনানি শেষে গুম সংক্রান্ত দু’টি অভিযোগ আমলে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম ও খুনের মামলায় সাবেক ও বর্তমান ২৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্য গুমের পর র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগও আনা হয়েছে। প্রথম অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৭ জন এবং দ্বিতীয় অভিযোগে ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুই তালিকায় রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের ৫ জন সাবেক মহাপরিচালকসহ অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তা; যাদের মধ্য ১৫ জন চাকরিরত ও একজন অবসরোত্তর ছুটিতে ছিলেন। বাকি কর্মকর্তারা অবসরে আছেন।






