তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতামতে মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তাদের বদলি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে এর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন মাঠ প্রশাসনকে যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ রাখতে। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
বিএনপির অভিযোগ, প্রশাসনে এখন জামায়াতের প্রভাব। জামায়াতের দাবি, বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারা প্রভাব বিস্তার করছে। আর এনসিপির অভিযোগ, বিএনপি ও জামায়াতপন্থিরা প্রশাসনের বিভিন্ন পদ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। তিন দলেরই অভিযোগ, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক সচিব ও সিনিয়র কর্মকর্তা বসে আছেন। তারা থাকলে নির্বাচনের সময় মাঠ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে না।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন মাস। সচিব পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত অনেক পদেই পরিবর্তন আনার আলোচনা চলছে। জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আগের আচরণ, রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং দায়িত্ব পালনের ইতিহাস বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে এসব বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ মাঠ কর্মকর্তা খুঁজে বের করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সাধারণত নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে প্রশাসন ও পুলিশে রদবদলের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়। এখন থেকেই বদলিতে ইসির মতামত ও পরামর্শ প্রাধান্য পাবে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পদায়ন ও পদোন্নতির জটিলতা এড়াতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের সুবিধার জন্য উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে গঠিত জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি বাতিল করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির মতামত নিয়ে বদলি-পদায়নে বেশ জটিলতার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় বদলি-পদায়নের ফলে জরুরি কাজগুলোও আটকে যায়। ফলে নির্বাচনের আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাতে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রদবদল করতে পারে সে জন্য এ কমিটি বাতিল করা হয়েছে।
নির্বাচনের আগে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়েও কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আসতে পারে। এ লক্ষ্যে বিগত সরকারের আমলে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সচিব ও অতিরিক্ত সচিবদের তালিকা নিয়ে পর্যালোচনা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। পরে ওই তালিকা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানোর পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তালিকায় অর্ধশত কর্মকর্তার নাম আছে, যারা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে পদোন্নতি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি নীতিগতভাবে বিবেচনায় নিয়েছে সরকার।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের আসন্ন নির্বাচনের সময় মাঠ প্রশাসনে রাখা হবে না বলে সরকারের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে যারা ডিসি রয়েছেন, তাদের অনেককে নির্বাচনের আগে সরিয়ে নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে চায় সরকার। এখন যারা ডিসি হওয়ার যোগ্য, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ কর্মকর্তা ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। আবার যারা দায়িত্বে ছিলেন না, তাদের অনেকের ডিসি হওয়ার মতো যোগ্যতা নেই। এ কারণে যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) দায়িত্ব পালন করছেন ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সংসদ নির্বাচনে বিগত তত্ত্বাবধায়ক ও বিএনপি সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তাকে মাঠে রাখতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক সময়ের আলোকে বলেন, তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতামতে মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তাদের বদলি করা হবে। যেকোনো বদলিতেই ইসির মতামত নেওয়া হবে। নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ থাকলে কোনো বিতর্কের সুযোগ থাকে না।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, বদলি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেকোনো পরিস্থিতিতে কর্মকর্তাদের বদলি করা হতে পারে। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদল করবে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নিরপেক্ষ সরকার। চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসনকে সাজাতে যেখানে যেভাবে করার দরকার তা করবে। সরকার তো তা করছে। এরপরেও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় রদবদল করে নেবে।






