পৌনে সাত ঘণ্টা পর রাজধানীর মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে চালু হওয়া উত্তরা-আগারগাঁও অংশসহ এ নিয়ে ১৬টি মেট্রোস্টেশনের ১৩টিই চালু করা সম্ভব হলো। বাকি তিনটি স্টেশন চালুতে কারিগরি ত্রুটি মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ফার্মগেটে মেট্রোরেল চলাকালে কম্পনরোধে ব্যবহৃত স্প্রিং (বিয়ারিং প্যাড) খুলে মাথায় পড়ে একজন পথচারী নিহতের জেরে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আড়াই ঘণ্টা পর দুপুর তিনটার কিছু পরে আগারগাঁও থেকে উত্তরা অংশের নয়টি স্টেশনে ট্রেন চলাচল শুরুর কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
আর ডিএমটিসিএলের বার্তায় জানা গেছে, সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত আরও চারটি স্টেশনে মেট্রোট্রেন চলাচল শুরু করা গেছে। দুর্ঘটনাস্থল ফার্মগেটসহ দুই পাশের দুই স্টেশন কারওয়ানবাজার ও বিজয় সরণিতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে কারিগরি ত্রুটি মেরামতের কাজ চলছে।
অর্থাৎ দুর্ঘটনার সাত ঘণ্টা পরও মতিঝিল-উত্তরা পুরো পথে মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব হয়নি।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফার্মগেট মেট্রোস্টেশন সংলগ্ন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে মেট্রোরেল চলাকালে কম্পনরোধে ব্যবহৃত স্প্রিং (বিয়ারিং প্যাড) খুলে মাথায় পড়ে নিহত হন ৩৫ বছরের তরুণ আবুল কালাম। ফুটপাত দিয়ে চলার সময় পিলার থেকে ভারী বিয়ারিং প্যাডটি ছিটকে পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
নিহত আবুল কালাম তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে। স্ত্রী আইরিন আক্তার এবং ছয় বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়েসন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় থাকতেন তিনি। ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির টিকিটের ডিলার কালাম কাজের জন্যই প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ–ঢাকা যাতায়াত করতেন।
দুপুরে কালামের মরদেহ দেখতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, নিহতের দাফন-কাফনের সব ব্যবস্থা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ করবে। কালামের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকার অর্থসহায়তা দেওয়া হবে। তাদের পরিবারে যদি কর্মক্ষম কেউ থেকে থাকেন, তাহলে যোগ্যতা অনুসারে তাকে মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়া হবে।
ডিএমটিসিএলের সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের লাইনের নিচে উড়ালপথের পিলারের সঙ্গে রাবারের বিয়ারিং প্যাড থাকে। এগুলোর প্রতিটির ওজন আনুমানিক ১৪০ বা ১৫০ কেজি। এসব বিয়ারিং প্যাড ছাড়া ট্রেন চালালে উড়ালপথ দেবে যাওয়া কিংবা স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্যেই আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরও একই এলাকার অন্য একটি পিলার থেকে মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ায় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, আগেরবারের দুর্ঘটনায় প্রায় ১১ ঘণ্টা লেগেছিল মেট্রোরেল পুরোপুরি সচল করতে। এবার কতো সময় লাগে, তা বলা যাচ্ছে না। তবে মেট্রোরেল পুরোপুরি সচলে কারিগরি ত্রুটি মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
পরিদর্শনে গিয়ে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টাও জানান, মেট্রারেলের বাকি অংশ চালু করতে একটু সময় লাগবে। কারণ, ক্রেন আসতে হবে। আবারও দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য মেরামতের পর পরীক্ষাও করতে হবে। এছাড়া মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাডটি খুলে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও জানান উপদেষ্টা।
সাংবাদিকদের ফাওজুল কবির খান জানান, বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনাটি নাশকতা, নাকি নির্মাণত্রুটির কারণে ঘটেছে, সেটি খুঁজে বের করতে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের কমিটিতে সদস্য রয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন অধ্যাপক, এমআইএসটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন অধ্যাপক, সড়ক বিভাগের একজন প্রকৌশলী ও মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালক।
