শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭, হেমন্তকাল

ইসরায়েলি পার্লামেন্টে পশ্চিম তীর দখলের বিল অনুমোদন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলি পার্লামেন্টে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল পশ্চিম তীরকে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার একটি  বিতর্কিত বিলের প্রস্তাবের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণভাবে পাস হলে অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের পূর্ণ সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও সংসদে সামান্য ব্যবধানে প্রাথমিক ভোটে এটি গৃহীত হয়।

১২০ সদস্যের নেসেটে ২৫–২৪ ভোটে বিলটি প্রথম ধাপে পাস হয়। পূর্ণ আইন হিসেবে কার্যকর করতে আরও তিন দফা ভোটে এটি অনুমোদন পেতে হবে। লিকুদ পার্টির প্রধান নেতানিয়াহু এর বিরোধিতা করলেও জোটের কয়েকজন সদস্য ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা বিলটির পক্ষে ভোট দেন।

নেসেটের অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিলটির উদ্দেশ্য “জুদিয়া ও সামারিয়া অঞ্চলে”—যা আন্তর্জাতিকভাবে পশ্চিম তীর নামে পরিচিত—“ইসরায়েল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ” করা। প্রস্তাবটি এখন সংসদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে আলোচনার জন্য পাঠানো হবে।

এই ভোট এমন এক সময় হয়েছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন যে ইসরায়েল পশ্চিম তীর সংযুক্তির অনুমতি পাবে না। একই সময় গাজায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফরে রয়েছেন।

নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন লিকুদ পার্টি এক বিবৃতিতে এই ভোটকে “বিরোধীদের রাজনৈতিক উসকানি” বলে উল্লেখ করেছে। তারা সতর্ক করে জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, “সত্যিকারের সার্বভৌমত্ব কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব।”

বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করা হলে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা কার্যত বিলীন হয়ে যাবে।

এই প্রাথমিক ভোটে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষসহ আরব দেশগুলো। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা নেসেটের সংযুক্তির এই প্রচেষ্টা কঠোরভাবে নিন্দা করছি। পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা একক ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক সত্তা—যার ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌম অধিকার নেই।”

ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস জানিয়েছে, “এই বিলগুলো দখলদার ইসরায়েলের উপনিবেশবাদী নীতি স্পষ্ট করে তুলেছে। পশ্চিম তীর দখলের এই প্রচেষ্টা বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য।” কাতারও এটিকে “ফিলিস্তিনি জনগণের ঐতিহাসিক অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ” বলে অভিহিত করেছে।

সৌদি আরব জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সব ধরনের বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমের তীব্র বিরোধিতা করে। জর্ডান এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী, যা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করবে।”

বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সাত লাখ ইসরায়েলি নাগরিক বসবাস করছে—যাদের বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক আইনে ‘অবৈধ বসতি’ হিসেবে চিহ্নিত স্থানে অবস্থান করছে।

মন্তব্য করুন

এ বিভাগের আরও খবর

ফটোগ্যালারী

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

কলিকাল | সত্য-সংবাদ-সুসাংবাদিকতা
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.