শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭, হেমন্তকাল

অক্টোবরেই বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত

কলিকাল প্রতিনিধি

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতির মাঠে প্রধান প্রতিপক্ষ জামায়াতে ইসলামী বেশ আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করলেও এখন চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। দলটি ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একসঙ্গে ডেকে এনে দলীয় বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। ঐক্য ধরে রেখে তৃণমূলে সবাইকে ধানের শীষে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাকে ধানের শীষের টিকিট দেওয়া হবে দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে তার পক্ষে থাকতে হবে সবাইকে। দলের হাইকমান্ড ইতিমধ্যে বিভাগওয়ারী স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন। তারা চলতি অক্টোবরের মধ্যেই দুইশ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চান।

কে কোন আসনে প্রার্থী হবেন- এ সময়ের মধ্যে দল থেকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে; অর্থাৎ সবুজ সংকেত দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো কোনো সদস্য চান, বিভ্রান্তি এড়াতে দলীয় এসব প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হোক। দলের হাইকমান্ডকে এমন পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, তা না হলে নির্বাচনের মাঠে তারা পিছিয়ে পড়বেন। গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যে পাঁচটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও মতামত নিয়েছেন তিনি। সবকিছু বিবেচনায় প্রায় দেড়শ আসনে তেমন জটিলতা দেখছে না দল। অর্থাৎ এসব আসনে প্রার্থিতা মোটামুটি চূড়ান্ত। তবে একাধিক প্রার্থী এবং গ্রুপিং থাকায় শতাধিক আসনকে ‘জটিলতাপূর্ণ’ বিবেচনা করে সংকট নিরসনে সাংগঠনিক উদ্যোগ নেয় বিএনপি।

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণার পক্ষে নেতারা : দলের এ সাংগঠনিক উদ্যোগের পরই মূলত আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি। অবশ্য এক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের না জানাতে হাইকমান্ড থেকে দেওয়া হচ্ছে কঠোর নির্দেশ। নির্বাচনের তফসিলের পর দলীয় সাংগঠনিক প্রক্রিয়া অর্থাৎ পার্লামেন্টারি বোর্ডের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত করা হবে। তবে মাঠে একাধিক প্রার্থী থাকায় এভাবে গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে একজনকে সবুজ সংকেত দেওয়ায় এবং সে বিষয়টি কেন্দ্র কিংবা দায়িত্বশীল কোনো পর্যায় থেকে খোলাসা না করায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। এমন অবস্থায় দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সবশেষ বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে না থাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকেই বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে জামায়াত ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে থাকলেও বিএনপি এখনও তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেনি। তবে প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রচারে রয়েছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে বিএনপি যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা গত মাসে তাদের প্রতিবেদনে দ্রুততম সময়ে প্রার্থিতা ঘোষণা করতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেন। এ ছাড়া দলের তৃণমূল পর্যায় থেকেও এমন পরামর্শ আসে।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক আজ : স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল’ প্রস্তুত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, সারা দেশে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটির অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির এবং বর্তমানে জামায়াতপন্থি। এমনটা হলে নির্বাচনে তারা একটা বিশেষ দলকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখতে পারে। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই সতর্কভাবে দলমত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে যাতে এ তালিকা প্রণয়ন করা হয়, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ লক্ষ্যে তারা আজ বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাবেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা চায় বিএনপি।

প্রশাসনে জামায়াতীকরণ বিষয়ে উদ্বেগ

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, কিছু কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে, বিশেষ একটি দলের পক্ষে কাজ করছে। বিশেষ করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জামায়াতীকরণ করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব রদবদল করা হচ্ছে বলেও নেতাদের অভিযোগ। এসব ঘটনায় বিএনপি উদ্বিগ্ন। এ উদ্বেগের কথা জানাতে এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। দেশের বাইরে থাকায় যোগ দিতে পারেননি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

প্রার্থী চূড়ান্ত করা প্রসঙ্গে ড. আব্দুল মঈন খান সময়ের আলোকে বলেন, প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হয়তো অক্টোবর শেষ হয়ে যাবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই কাজ করছেন। শরিক দলগুলোকে এবার হয়তো ২০-২৫টির মতো আসনে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে। ২০১৮ সালের চিত্র আর এবারের চিত্র ভিন্ন। ওই সময় জামায়াতে ইসলামী ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছিল।

এ বিষয়ে সেলিমা রহমান সময়ের আলোকে বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তা চূড়ান্ত করা হবে। বিভাগওয়ারী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডাকা হচ্ছে। দায়িত্বশীল নেতারা তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। দলের চূড়ান্ত বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। আশা করি দ্রুতই আমরা বেশিরভাগ আসনের প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করতে পারব।

মন্তব্য করুন

এ বিভাগের আরও খবর

ফটোগ্যালারী

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

কলিকাল | সত্য-সংবাদ-সুসাংবাদিকতা
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.