ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা কাটেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক সমঝোতা আপাতত স্থগিত থাকায় অঞ্চলটিতে বড় আকারের সামরিক সংঘাতের শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে নতুন করে ইসরায়েলের বড় ধরনের হামলা প্রতিরোধে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ইরানের সামরিক বাহিনী।
তেহরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন, কূটনৈতিক আলোচনা পুনরায় শুরু করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের উপর আর কোনও হামলার সম্ভাবনা বাতিল করতে হবে।
মাজিদ তাখত-রাভানচি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানকে জানিয়েছে, তারা এই সপ্তাহে আলোচনায় ফিরে আসতে চায়, কিন্তু আলোচনা চলাকালীন আরও হামলার ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন’ সম্পর্কে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
সম্প্রতি মেহের নিউজের বরাতে ইরানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আবুলফজল শেকারচি জানিয়েছেন, ‘জায়োনিস্ট ভূখণ্ডকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করা চলে না। চিরসংঘাতহীন বিশ্বের কথা ইরান কখনো কল্পনা করতে পারেনি। তাই জায়োনিস্টরা যদি আগ্রাসন চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে পালটা জবাব দিতে দ্বিধা করবে না ইরান।’
ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পরমাণু কার্যক্রম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘তারা ভাবেনি আমরা এমন হামলা করতে পারি।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণু কার্যক্রম মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে কিন্তু ‘সম্পূর্ণ নয়’।
গ্রোসি আরও বলেন, “কয়েক মাসের মধ্যে” ইরান আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করার ক্ষমতা রাখে।
ইরান বরাবরই দাবি করছে, সামরিক কার্যক্রমের জন্য পরমাণু প্রকল্প পরিচালনায় তারা আগ্রহী নয়। কিন্তু পারমাণবিক বোমা প্রস্তুত করার মতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করায় গোটা বিশ্ব উদ্বেগে রয়েছে।
বিশ্বশক্তির সাথে ২০১৫ সালে সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তির অধীনে, ইরানকে ৩.৬৭% বিশুদ্ধতার বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি ছিল না – বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় স্তর – এবং ১৫ বছরের জন্য তাদের ফোর্ডো প্ল্যান্টে কোনও সমৃদ্ধকরণের অনুমতি ছিল না।
সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটানা ১২ দিন যুদ্ধ চলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্ততায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সমস্যা হলো, এ সমঝোতা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ট্রাম্পকে ‘আল্লাহর শত্রু’ বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে ইরানের রাজনীতিবিদ আলি শামখানি রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ইরনাকে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলেও সব আশা শেষ, এমন ভাবার কারণ নেই। কারণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার উপায় জানা আছে। এই মুহূর্তে ইরানকে তাদের প্রতিরক্ষা জোরদার করার বিষয়ে মনোযোগ বাড়াতে হবে। এভাবে তারা পরবর্তী সময়ে কোনো বৈষম্যের বিরুদ্ধেও শক্ত অবস্থান নিতে পারবে।’