ঈদের দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১১৭ জন ফিলিস্তিনি | কলিকাল
মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ ৩ আষাঢ় ১৪৩২ ২০ জিলহজ ১৪৪৬

মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জিলহজ ১৪৪৬

ঈদের দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১১৭ জন ফিলিস্তিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৫ | ২:৪৭ পিএম

ঈদের দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১১৭ জন ফিলিস্তিনি

ছবি : সংগৃহীত

গাজায় হামাস নির্মূল এবং জিম্মি উদ্ধারের নামে ইসরায়েল যেভাবে বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, তা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে।

একদিকে টানা সামরিক অভিযান, অন্যদিকে খাদ্য ও ওষুধের মতো জরুরি সহায়তা সরবরাহে বাধা; ফলে গাজার পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে আরও শোচনীয়। এমনকি ঈদের দিনও রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষ; দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১১৭ জন ফিলিস্তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো গাজা উপত্যকায় ৬ জুন উদযাপিত হয় ঈদুল আজহা। সেদিন এবং এর পরদিন ৭ জুনও ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালায়। ৬ জুনের হামলায় নিহত হন অন্তত ৪২ জন, আর ৭ জুন ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারান আরও অন্তত ৭৫ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ১০০ জন।

এই তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগ, যা কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা রবিবার (৮ জুন) প্রকাশ করে।

ঈদের পরদিন নিহতদের মধ্যে একটি পরিবারের ১৬ জন সদস্যও রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ জন শিশু। পরিবারটি গাজা সিটির সাবরা এলাকায় বসবাস করত।

গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল বলেন, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী আগাম কোনো সতর্কতা ছাড়াই এই হামলা চালায়। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অন্তত ৮৫ জন আটকা পড়ে আছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এই হামলাটি ছিল পরিকল্পিত ও নির্মম। হতাহতদের সবাই সাধারণ মানুষ—তাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছেন।”

গাজা শহরের বাসিন্দা হামেদ কেহিল জানান, “প্রতিবছর এই সময় আমরা উৎসবের আনন্দে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিলিত হতাম। এবার সেই আনন্দ রূপ নিয়েছে শোকে। আমাদের সন্তানদের নতুন পোশাক নয়, বহন করতে হয়েছে তাদের নিথর দেহ।”

একই শহরের আরেক বাসিন্দা হাসান আলখোর বলেন, “গত দুই বছরে ইসরায়েল যা করেছে, তার বিচার একদিন সৃষ্টিকর্তার কাছে দিতে হবে নেতানিয়াহুকে।”

এদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা হামাসের এক নেতা আসাদ আবু শারিয়াকে লক্ষ্য করে এই অভিযান চালিয়েছে। তিনি হামাসের সামরিক শাখার অন্তর্গত মুজাহিদিন ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সেই আলোচিত হামলায় অংশ নিয়েছিলেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবরের ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। প্রায় ১৫ মাস পর ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এরপর প্রায় দুই মাস গাজায় কিছুটা স্থিতিশীলতা বজায় থাকলেও, মার্চের শেষ দিকে ফের শুরু হয় ইসরায়েলি হামলা।

সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, গত ১৭ মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৭৭ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ জন। এই হতাহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরায়েলকে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানালেও, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে জানিয়েছেন—যতক্ষণ না হামাসকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করা যাচ্ছে এবং জিম্মিদের উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে, ততক্ষণ এই অভিযান চলবে।

মন্তব্য করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

Archive Calendar

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930