রাজনীতির কৌশল : ধৈর্য্য ও সততার অপরিহার্য সংমিশ্রণ | কলিকাল
মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ ৩ আষাঢ় ১৪৩২ ২০ জিলহজ ১৪৪৬

মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জিলহজ ১৪৪৬

একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

রাজনীতির কৌশল : ধৈর্য্য ও সততার অপরিহার্য সংমিশ্রণ

কৃষিবিদ মো. আতিকুর রহমান

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫ | ৭:১৭ পিএম

রাজনীতির কৌশল : ধৈর্য্য ও সততার অপরিহার্য সংমিশ্রণ

ছবি ডিজাইন : দৈনিক কলিকাল

রাজনীতি কখনোই কেবল বক্তৃতা, প্রতিশ্রুতি কিংবা নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এক গভীর কৌশলগত খেলা, যেখানে সফলতার মাপকাঠি কেবল জনপ্রিয়তা নয়—বরং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং ব্যক্তিগত মূল্যবোধের দৃঢ়তা। আর এই মূল্যবোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুটি শক্তিশালী উপাদান: ধৈর্য্য ও সততা।

ধৈর্য্য: রাজনীতির মৌলিক ভিত্তি

রাজনীতিতে কেউ রাতারাতি নেতা হয়ে ওঠে না। প্রকৃত নেতারা দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করেন, বারবার ব্যর্থ হন, আবার উঠে দাঁড়ান। এই সংগ্রামী পথচলার একমাত্র সহযাত্রী ধৈর্য্য। এটি শুধু সময় পার করার গুণ নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণ, উপলব্ধি ও অপেক্ষার শক্তি।

একজন রাজনীতিককে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে, নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে বা জনগণের আস্থা অর্জন করতে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়। তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্ত হয়তো তাৎক্ষণিক সাড়া জাগাতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ধৈর্য্য একজন নেতাকে শেখায় কীভাবে সংকটে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়, কীভাবে প্রতিপক্ষের কৌশল বুঝে সময়মতো জবাব দিতে হয়।

সততা: বিশ্বাসযোগ্যতার মূল স্তম্ভ

সততা শুধু দুর্নীতিমুক্ত থাকা নয়—এটি হলো মন ও মুখের মিল, কাজ ও কথার সামঞ্জস্য। রাজনীতির মঞ্চে বহু নেতা মুখে বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু কাজে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। এর ফলেই জনগণের মধ্যে জন্ম নেয় সন্দেহ ও আস্থাহীনতা।

সততা একজন রাজনীতিককে দেয় স্থায়ী ভিত্তি। জনগণ একজন নেতার কথার পেছনে বিশ্বাস খোঁজে। তারা চায় এমন একজনকে, যার বক্তব্যে গোপন ফাঁদ নেই, যার সিদ্ধান্তে ব্যক্তিগত লাভের চিন্তা নেই। একজন সৎ নেতা নিজের ভাষায়, কাজে ও আচরণে স্থিতিশীল থাকেন। তিনি যা বলেন, তা করেন; আর যা করেন, তা মানুষের ভালোর জন্য।

ধৈর্য্য ও সততার যুগলবন্দী: আদর্শ নেতৃত্বের পথ

রাজনীতির বাস্তবতা জটিল—চাপে, প্রতিযোগিতায়, ষড়যন্ত্রে অনেকেই পথ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে, যাঁরা ধৈর্য্য ও সততাকে একসঙ্গে ধারণ করতে পেরেছেন, তাঁরাই প্রকৃত নেতৃত্ব গড়ে তুলেছেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধী, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান—তাঁরা শুধু রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, ছিলেন নীতির মডেল। তাঁদের নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে অগণিত ত্যাগ, অন্তহীন ধৈর্য্য আর আপসহীন সততার ভিতের ওপর। তাঁদের অর্জন কেবল রাজনৈতিক নয়—মানবতার ইতিহাসেও তাঁরা অনন্য।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা

বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে চিত্রটি ঘন ঘন দেখা যায় তা হলো: হঠাৎ হঠাৎ উত্তেজনা, বিভাজন, অপরকে দোষারোপের প্রবণতা। রাজনীতির জায়গা যেন এক ধরনের প্রতিযোগিতামূলক কৌশলের খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে মূল্যবোধের জায়গা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।

এই সংকটে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন নেতৃত্ব, যারা ধৈর্য্য ধরে সময়ের দাবি বুঝে কাজ করবে, এবং সত্যবাদিতার শক্তিকে অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ—তাঁরা যেন রাজনীতিকে কেবল জনপ্রিয়তা বা ক্ষমতার খেলা না ভেবে, একটি দায়িত্ব ও মূল্যবোধের জায়গা হিসেবে বিবেচনা করে।

উপসংহার

রাজনীতি আজ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চটকদার প্রতিশ্রুতি, মিডিয়ায় প্রচারের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রতিপক্ষকে হেয় করার প্রবণতা অনেক নেতাকে মূল গন্তব্য থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থে ইতিহাস গড়তে চান, তাঁদের পথ আলাদা—তাঁরা ধৈর্য্য ও সততার শক্তিকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যান।

এই পথ হয়তো কঠিন, ধীর, এবং অনিশ্চিত মনে হতে পারে, কিন্তু একদিন এই পথেই মানুষ ফিরে পায় একজন প্রকৃত নেতাকে—যার প্রতি তারা নিঃশর্তভাবে আস্থা রাখতে পারে। রাজনীতি যদি একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের হাতিয়ার হয়, তবে সেই নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর হোক ধৈর্য্য ও সততার মজবুত ভিত।

লেখক :

কৃষিবিদ মো. আতিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
এবং
আহ্বায়ক,
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।

মন্তব্য করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

Archive Calendar

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930