ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫ | ৭:৪৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রাম টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৫ রানের ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে টানা ছয় পরাজয়ের পর অবশেষে জয়ের দেখা পেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দুই ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হলো।
জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানের জবাবে তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ অলআউট হওয়ার আগে তুলেছে ৪৪৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীরা ১১১ রানেই গুটিয়ে যায়।
ম্যাচটিকে স্মরণীয় পারফরম্যান্সে রাঙিয়ে রাখলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেঞ্চুরির পর বল হাতে নিলেন ৫ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট পাওয়া তাইজুল ইসলাম সফরকারীদের পরের ইনিংসে নিলেন ৩ উইকেট।
আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বন্দরনগরীর আকাশে মেঘের ঘনঘটা ছিল গত দুদিন ধরেই। তবে বৃষ্টি নামেনি। আজ চট্টগ্রাম শহরকে স্বস্তি দিতে শুরু হলো বৃষ্টি। তাতে অবশ্য বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে টেস্টের খেলায় এসেছে বাধা।
তৃতীয় দিন সকালে মোটে ১৬ বল খেলার পরেই উঠে যেতে হয়েছে দুই দলের ক্রিকেটারদের। দ্বিতীয় দফায় লাঞ্চ ব্রেকের আগে আবারও বৃষ্টির হানা। এর মাঝেই তাইজুলকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। ৪৫ বলে ২০ রান করা তাইজুলকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন ভিনসেন্ট মাসেকেসা।
নবম উইকেট জুটিতে ৯৬ রানের জুটিতে তানজিম সাকিবের সঙ্গে লিড বাড়িয়ে নেন মিরাজ, একসময় দলীয় স্কোর চারশ পেরিয়ে যায়। টেস্ট অভিষেকে তানজিমের ব্যাটে আসে ৮০ বলে ৪১ রান। তাকে ফেরান ওয়েসলি মাধেভেরে। এই স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে টাইমিং করতে না পারায় শর্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
তানজিম সাকিবের বিদায়ের খানিক পর সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ১৪৩ বলে সেঞ্চুরি আসে মিরাজের ব্যাটে, দুইশ ছাড়ায় বাংলাদেশের লিড।
শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন মিরাজ। মাসেকেসার বলে ডাউন দ্যা উইকেটে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকারের আগে ১৬২ বলে ১১ চার ও এক ছক্কায় ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন। শেষ ব্যাটসম্যান হাসান মাহমুদ অন্য প্রান্তে ১৬ বলে শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন।
২১৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নামা সফরকারীদের শুরুটা ভালো হয়নি। ওপেনার ব্রায়ান বেনেট (৬) দ্বিতীয় স্লিপে সাদমান ইসলামের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরেন। খানিক পরই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন নিক ওয়েলচ (০)। একই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। নাঈম হাসানের বলে দ্বিতীয় স্লিপে সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন শন উইলিয়ামস (১৭ বলে ৭)।
২৫ রান করা ক্রেইগ আরভিনকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে চতুর্থ উইকেট এনে দেন মিরাজ। রানের খানা না খুলে লেগ বিফোরে কাটা পড়েন ওয়েসলি মাধেভেরে। রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে তাফাদজওয়া সিগা শূন্য রানে শর্টে থাকা এনামুল হক বিজয়ের তালুবন্দি হন। চোখের পলকে ৩ উইকেটে ৬৯ থেকে জিম্বাবুয়ের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৭৩ রান।
মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন ১০ রান করা ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। আকাশে উঠে যাওয়া বলটি ধরে ফেলেন মিড অফ ফিল্ডার তাইজুল ইসলাম। অন্য পাশে একের পর এক উইকেট পড়লেও অবিচল ছিলেন বেন কারেন। ৪৬ রান করা জিম্বাবুয়ে ওপেনারকে উইকেটরক্ষক জাকের আলী অনিকের ক্যাচ বানিয়ে ইনিংসে পঞ্চম উইকেট পান মিরাজ।
সেঞ্চুরি পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়ার বিরল এক কীর্তিতে নাম লেখান মিরাজ। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর বাংলাদেশের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন। সাকিবের এই কীর্তি আছে দুবার। সব মিলিয়ে টেস্টে ইতিহাসে এমন কীর্তি নেওয়ার ঘটনা ৩৯টি।
রিচার্ড এনগারাভাকে হাসান মাহমুদের ক্যাচ বানিয়ে বাংলাদেশকে নবম উইকেট এনে দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তোলেন এনগারাভা। ম্যাচে এটি তাইজুলের এটি নবম উইকেট।
দিনের নির্ধারিত ওভার শেষ হয়ে যাওয়ার পর সময় বাড়িয়েছিলেন আম্পায়াররা। বাড়তি সময়ের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই রানআউট হয়ে যান জিম্বাবুয়ের ভিনসেন্ট মাসেকেসা। মুমিনুল হকের থ্রো ভেঙে দেয় উইকেট। টিভি আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দিলে নিশ্চিত হয় তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ইনিংস ব্যবধানে জয়।